আজ-  ,


সময় শিরোনাম:
«» মৌলভীবাজারে সাঁতার প্রশিক্ষণ শুরু «» নওগাঁয় ১৫ টন সরকারি রেশনের চাল কেনার অপরাধে ১ লাখ টাকা জরিমানা «» নওগাঁয় ইটের ভাটায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানশিমুল হাসান «» মৌলভীবাজার সদর উপজেলা তালামীযের ঈদ পুণর্মিলনী অনুষ্ঠিত নিজস্ব প্রতিবেদক।। «» জুড়ীতে টিলাবাড়ি ক্রয় করে মালিকের প্রতারণার শিকার কৃষক শাসন «» মৌলভীবাজারের ১৪ জন শিক্ষক পেলেন টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক «» শ্রীমঙ্গলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের তামাক নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা বাস্তবায়নে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত «» মৌলভীবাজারে অনুর্ধ্ব-১৬ বছরের শিক্ষার্থীদের মাসব্যাপী সাঁতার প্রশিক্ষণ শুরু «» শমশেরনগর হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তিতে বিলেতের বৈঠকে কবি ও গবেষক সৈয়দ মাসুম এর লিখিত স্বাগত বক্তব্য «» মৌলভীবাজারে মবশ্বির-রাবেয়া ট্রাস্ট্রের উদ্যোগে ৬ মে দিনব্যাপী ফ্রি পবিত্র হজ প্রশিক্ষণ

মুক্তিযুদ্ধের অনন্য স্মারক বিজয় ফুল বুকে ধারন করুন; অন্যকে পরতে বলুন

মুক্তিযুদ্ধের অনন্য স্মারক বিজয় ফুল বুকে ধারন করুন; অন্যকে পরতে বলুন

-মকিস মনসুর

বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক রাজনৈতিক স্বপ্ন সাধ পূরণ হয় এ মাসে।

বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় গৌরবদীপ্ত চূড়ান্ত বিজয় এ মাসের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়। স্বাধীন জাতি হিসেবে সমগ্র বিশ্বে আত্মপরিচয় লাভ করে বাঙালিরা। অর্জন করে নিজস্ব ভূখন্ড আর সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা। ভাষার ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল, এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ঘোষিত স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় এ দিনে। বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নপূরণ হবার পাশাপাশি বহু তরতাজা প্রাণ বিসর্জন আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই অর্জন হওয়ায় বেদনাবিধূর এক শোকগাঁথার মাসও এই ডিসেম্বর। এখানে উল্লেখ্য যে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে একটি পতাকার জন্য ও একটি মানচিত্রের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তাঁরা কোটি কোটি জনতার মাঝে বিজয়ী বেশে উজ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে আছেন।

যদিও তাঁরা আমাদের মনন, মগজে ও চেতনায় জাগ্রত আছেন। তারপরেও শ্রদ্ধার একটু বহিঃপ্রকাশ এই বিজয়ফুল। বিজয়ফুল প্রবাসে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধাদের তাদের বীরত্বের কথা নতুন প্রজন্মকে বলার সুযোগ করে দিয়েছে। এ কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে, প্রবাসে নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশ এবং তার জন্ম-ইতিহাস সম্পর্কে জানানো। ব্রিটেনে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধারা দল-মত ভুলে গিয়ে একই কাতারে দাঁড়িয়ে পতাকার রঙে প্রস্ফুটিত বিজয়ফুলের মাহাত্ম্য বলতে গিয়ে তুলে আনছেন সঠিক ইতিহাস।

৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে লুপ্ত চেতনা পুনরুদ্ধার করার জন্য এবং চিন্তা-চেতনার অবক্ষয় দূর করার জন্য বিজয়ফুল কর্মসূচির গুরুত্ব অপরিসীম। নতুন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বার্তা পৌঁছে দেওয়াই বিজয় ফুল কর্মসূচির মূল অঙ্গীকার।

সূত্রমতে জানা যায়, ‘বিজয় ফুল’ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জনগণ তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে বছরের একটি বিশেষ দিনে পোশাকে বিশেষ প্রতীক ধারণ করে থাকে। যেমন- যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স ও বেলজিয়াম প্রতিবছর ১১ নভেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত তাদের বীর শহীদদের স্মরণে ‘রিমেমব্রান্স ডে’ উদযাপন করে। যেসব যোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষ যুদ্ধে নিহত হয়েছেন, ওইদিন তাদের স্মরণে পোশাকে লাল পপি ফুল ধারণ করে থাকেন। সেই ধারণা থেকেই বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের স্মরণে ডিসেম্বরে বিজয় ফুলের প্রচলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিজয় ফুলের সৃতিকাগার লন্ডন, বিশিষ্ট কবি শামীম আজাদ বিলেত থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয় নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি ও ক্যম্পেইন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিজয়ফুল এর সৃষ্টি। বহির্বিশ্বে বসবাসরত বাংলাদেশীদের কাছে বিজয়ফুল হয়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক।

প্রবাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাসকে তুলে ধরার জন্য বিজয়ফুল কর্মসূচি ২০০৭ সাল থেকে তথা গত ১৬ বছর যাবৎ এই কর্মসূচী উদযাপিত হয়ে আসছে। এই কর্মসূচি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে দেশে দেশে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি ডিসেম্বরে বহু বাঙালীরা বুকে বিজয়ফুল পরেন, হৃদয়ে বিজয়ের চেতনা ধারণ করেন।

বিজয়ফুল তৈরীর সময়ে একটি ক্রিয়েটিভ কর্মকান্ডের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের কাছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার সুযোগটা পাওয়া যায়। বিজয়ফুল একটা উপলক্ষ্য। বাচ্চারা বিজয়ফুল তৈরী করার সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা পাশে বসে মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ জয়ের গল্প শোনান। এতে নতুন প্রজন্মের কাছে একাত্তরের বার্তা পৌঁছে যায়।

ছেলেমেয়েরা যখন নিজ হাতে পাঁচটি সবুজ পাপড়ি ও একটি লাল গোলকের সম্মিলনে ফুল তৈরী করে, তখন তাদের শেখানো হয় মাঝখানের বৃত্ত আমাদের বিজয়ের লাল সূর্য, আর পাঁচটি পাপড়ির মাধ্যমে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা, নানা ধর্মের মানুষের সহমর্মিতা, আমাদের মৌলিক অধিকার, দেশের নদী, সবুজ প্রকৃতি ইত্যাদি। তাই বিজয়ফুল বানানোর সময় নতুন প্রজন্মের সামনে গোটা বাংলাদেশের চিত্র ফুটে ওঠে।

একনজরে বিজয় ফুল: সবুজ পাঁচটি পাপড়ি, মাঝখানে লালবৃত্ত দিয়ে লাল সবুজের পপি ফুল, এটি বাঙালীর বিজয় ফুল, বিজয়ফুল একটি ছোট্ট স্মারক, যা বুকে পরা হয়। বিজয়ফুল পরা হয় ১লা ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

বিজয়ফুলের প্রধান লক্ষ্য মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করা। আর তাই আমাদের শহীদ মুক্তিযুদ্ধাদের স্মরণ ও নব প্রজন্মের সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার মানসে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই বেগবান করার অঙ্গিকার নেয়ার মধ্য দিয়ে বিজয়ের গৌরবে সমুন্নত থাকুন এবং ‘৭১ এর শহীদানদের স্মরণ করুন আর বাংলাদেশের বিজয়কে বুকে ধারণ করুন’ শ্লোগান এর মাধ্যমে ১লা থেকে ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে “আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিজয়ের প্রতীক বিজয় ফুল বুকে ধারন করুন, অন্যকে পরতে বলুন। বিজয় ফু‌লের সাথে জড়িত দেশে বিদেশের সকল উদযাপক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সংগ্রামী অ‌ভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা সহ এই কর্মসূচির উত্ত‌রোত্তর সফলতা কামনা করছি। জয় বাংলা, হৃদয়ের বাংলাদেশ চীরজীবি হোক..।।

মকিস মনসুরঃ ইউকে বিজয়ফুল কর্মসূচীর ওয়েলসের উদযাপক, কনভেনার- গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকে, চেয়ারম্যান- ইউকে বিডি টিভি।